যাদুকরের হাজিরা দেখা, আপনাদের বিভ্রান্তি!
July 29, 2021হিজামা চিকিৎসা ও আমার অভিজ্ঞতা
November 16, 2021হিজামা কি?? ★কেন হিজামা করা হয়?? ★এতে কি কি উপকার রয়েছে?
★হিজামা (حِجَامَة ) একটি নববী চিকিৎসা ব্যবস্থা। এটি আরবী শব্দ ‘আল-হাজম’ থেকে এসেছে। যার অর্থ চোষা বা টেনে নেওয়া। আধুনিক পরিভাষায় Cupping (কাপিং)।
হিজামার মাধ্যমে দূষিত রক্ত (Toxin) বের করা হয়। এতে শরীরের মাংসপেশী সমূহের রক্ত প্রবাহ দ্রুততর হয়।
পেশী, চামড়া, ত্বক ও শরীরের ভিতরের অরগান সমূহের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীর সতেজ ও শক্তিশালী হয়।
★হিজামা বা Wet Cupping অতি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে আরব বিশ্বে জনপ্রিয়।
এ হিজামা থেরাপী ৩০০০ বৎসরেরও পুরাতন চিকিৎসা পদ্ধতি।
মধ্যপ্রাচ্য থেকে উৎপত্তি হ’লেও চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে চীন, ভারত ও আমেরিকায় বহু পূর্বে থেকেই এটি প্রচলিত ছিল। ১৮ শতক থেকে ইউরোপেও এর প্রচলন রয়েছে।
হিজামা বা Cupping Therapy এখন বিশ্বের জনপ্রিয় চিকিতৎসা গুলোর মধ্যে একটি। এটিতে কোন ধরনের ঔষধের প্রয়োজন হয় না।
★ রসুল (সা:)বলেছেন- জিবরীল_আমাকে_জানিয়েছেন_যে_মানুষ_চিকিৎসার_জন্য_যেসকল পন্থা_অবলম্বন_করে_তার_মধ্যে_হিজামাই_হল_সর্ব_উত্তম। আল-হাকিম, হাদিস নম্বরঃ ৭৪৭০
★ পদ্ধতিঃ শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশ থেকে মেশিনের সাহায্যে দূষিত রক্ত (Toxins) চুশে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, হিজামায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করা উত্তম এবং প্রত্যেকের চিকিৎসায় ভিন্ন ভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করা উচিত যাতে রক্তজীবাণুর মাধ্যমে রোগ সংক্রমিত হতে না পারে।
★হিজামা করার ক্ষেত্রে কিছু দিক নির্দেশনাঃ
১। নিয়তকে একেবারে পরিশুদ্ধ রাখা যে শিফা/রোগ মুক্তি শুধু মাত্র আল্লাহ্সুবহানাহু ওয়া ওয়ালার পক্ষ থেকে আশে।
২। খালি পেটে হিজামা করা উওম ।
৩। গোসল করে হিজামা করাটা ভালো, তবে গোসলের তিন ঘণ্টা পর হিজামা করতে হবে।
৪। হিজামার আগের দিন ও পরের দিন সঙ্গম না করা ভালো।
৫। ইহরাম/সাওম অবস্থায় হিজামা করা যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে মুহরিম ও সাওম অবস্থায়ও হিজামা করেছেন।
৬। স্বাভাবিক অবস্থায় সপ্তাহের সোম, মজ্ঞল ও বৃহস্পতি বার করা ভালো।
এছাড়াও আরবি মাসের ১৭, ১৯ ও ২১ তারিখ হিজামা করানো উওম।
তবে প্রয়োজনে যে কোন দিন যে কোন সময়েও হিজামা করা যায়।
★ হিজামা কেন করাবেন?
আপনার রোগ হলে যেমন ডাক্তারের কাছে যান। তারপর প্রয়োজন পড়লে অস্ত্রপোচারও করান।
তেমনি আপনার রোগের জন্য হিজামা করাবেন। তাহলে ফায়দা স্বরূপ রোগ থেকে ইনশাআল্লাহ মুক্তি পাবেন এবং রাসূল সাঃ এর একটি সুন্নাতের উপরও আমল করা হলো।
হিজামা এক ধরণের চিকিৎসা যা শরীর থেকে রোগের জন্য দায়ী জীবাণু বের করে ফেলে। এর মাধ্যমে বর্তমানে সংক্রামক সকল রোগের চিকিৎসা করা হচ্ছে।
এছাড়া অসংক্রামক অনেক রোগ ও ভালো হয় নিয়মিত হিজামা করালে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধ করে ও রক্ত পরিষ্কার রাখে।
হিজামাকে নববী চিকিৎসা বলা হয়। কারণ মেরাজের রাতে স্বয়ং ফেরেশতাগণ আল্লাহ্র নবী রাসূল্লুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম কে এ বিশেষ চিকিৎসাটি তাঁকে ও তাঁর উম্মাতদের করাতে বলেছেন।
ইবনে আব্বাস (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) মিরাজে যাওয়ার সময় তিনি ফিরিশতাদের যে দলের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেন তারাই বলেন,
‘হে আল্লাহর মোহাম্মদ (সে:) আপনি অবশ্যই হিজামা করুনএবং আপনার উম্মাতদের হিজামার হুকুম করুন।(সুনানে তিরমিযী-৩৪৬২) “আপনার উম্মাতদের হিজামা নিতে বলুন।”
(সুনানে তিরমিযী-৩৪৭৯)
★হিজামা এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যাতে অন্যান্য মেডিক্যাল ড্রাগসের মত কোন সাইড ইফেক্ট নেই। কেবল নিরাময় আছে (সুবাহনাল্লাহ) । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের জন্য এ চিকিৎসাটি করিয়েছিলেন। ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে এবং তাঁকে বিষ দ্বারা আক্রমণ করা হলে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) বর্ণনা করেছেন যে, “এক ইহুদী মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বিষযুক্ত গোশত খেতে দিয়েছিল। তিনি তাকে সংবাদ পাঠিয়ে বললেন, কেন তুমি এ কাজ করলে? মহিলাটি উত্তরে বলল, যদি তুমি সত্যিই আল্লাহর রাসূল হও, তবে আল্লাহ তোমাকে জানিয়ে দিবেন। আর তুমি যদি তাঁর রাসূল না হও, তবে আমি মানুষকে তোমার থেকে নিরাপদ রাখব! যখন আল্লাহর রাসূল (সা.) এর যন্ত্রণা অনুভব করতে লাগলেন, তিনি হিজামা ব্যবহার করলেন। একদা ইহরাম অবস্থায় তিনি ভ্রমণে বের হ’লেন এবং ঐ বিষের যন্ত্রণা বোধ করলেন, তখন তিনি হিজামা ব্যবহার করলেন।”(মুসনাদে আহমাদ ১/৩০৫, সনদ হাসান) ইবনুল ক্বাইয়ুম (রহ.) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন যাদু দ্বারা পীড়িত হন তখন তিনি মাথায় হিজামা লাগান এবং এটাই সবচেয়ে উত্তম ঔষধ, যদি সঠিকভাবে করা হয়।”(যাদুল মা‘আদ ৪/১২৫-১২৬) হযরতজাবির (রাযি.) হ’তে বর্ণিত যে, নবী করীম (সা.)-এর (পায়ে) যে ব্যথা ছিল, তার জন্য তিনি ইহরাম অবস্থায় হিজামা লাগিয়েছিলেন।(নাসাঈ হা/২৮৫২) বহু দেশেই এ চিকিৎসাটি এখন করা হচ্ছে। বিশেষ করে UK ও USA তে এ চিকিৎসার গুরুত্ব বুঝতে পেরে এর উপর রীতিমত হিজামা রিসার্চ সেন্টার করে রিসার্চ করা হচ্ছে। ক্যানসারের মত মরণ ঘাতক অসংক্রামক রোগের চিকিৎসাও সম্ভব সুলভ-মূল্যের এ চিকিৎসা দ্বারা।
★হিজামা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে নিয়েছেন ও অন্যদের করতে বলেছেন। “তোমরা যেসব পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাও হিজামা সেগুলোর মধ্যে উত্তম ব্যবস্থা অথবা (বলেছেন) এটি তোমাদের ঔষধের মধ্যে অধিক ফলদায়ক”। (মুসলিম হা/৩৯৩০). এটি যদি উপকারি নাই হত তাহলে নবী করীম সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি নিতে বলতেন না। সুতরাং এটি একটি সুন্নাহ চিকিৎসা যা হাদীস দ্বারা বিশদভাবে আলোচিত। বিজ্ঞান দ্বারা এখন প্রমাণিত।এটা যে কোন রোগের জন্য করাতে পারেন। যেমন: মাথাব্যথায় হিজামা : হযরত সালমা (রাযি.) বর্ণনা করেছেন, ‘যখন কেউ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে মাথাব্যথার কথা বলত, তখন তিনি তাদের হিজামা করার কথা বলতেন। (আবুদাঊদ হা/৩৮৫৮, সনদ হাসান) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর মাথায় হিজামা লাগিয়েছিলেন। (বুখারী হা/৫৬৯৯)
★হিজামার মাধ্যমে শরীরের বিষাক্ত বর্জ্য পানি বের করে ফেলা হয় যার ভেতর থাকে CPS, CRS and pathogens যার প্রকৃত উপকারিতা অনেক গুণ বেশি। যা সকল রোগ সারানোর একক ভূমিকা পালন করে। এর কোন সাইড ইফেক্ট ও নেই যদি তা expert দের দ্বারা করানো হয়।
★আধুনিক গবেষণা হিজামা নিয়ে বিস্ময়কর সব তথ্য দিচ্ছে। যা যা আল্লাহর রাসূল ১৪০০ শত বছর আগে বলে গেছেন সেগুলোরই বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মিলছে বর্তমানের রিসার্চ পেপার গুলো থেকে। সেগুলোই আমরা তুলে ধরব আস্তে আস্তে। একাধিক হাদীসের রেওয়াত থেকে এটা প্রমাণিত জীবনুযুক্ত রক্ত অপসারণের এ চিকিৎসা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন সময় নিয়েছেন যেটা হিজামা হিসেবে বহু হাদীসে এসেছে। এছাড়া ড্রাই কাপিং ও করানো যায়(যেখানে কোন স্ক্রাচ করা হয় না। হিজামার উপর গবেষণা প্রাপ্ত উপাত্ত বলে পৃথিবী তে এরকম আর দ্বিতীয় কোন চিকিৎসা নেই যা একই সাথে এত রোগের চিকিৎসা করে। হিজামা একই সাথে সংক্রামক ও অসংক্রামক উভয় ধরনের অসংখ্য রোগের চিকিৎসা। অনেকে আল্লাহ প্রদত্ত চিকিৎসা বলে এক বা দুই সেশন নিয়েই হতাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু রোগের প্রকারভেদ ও স্থায়িত্ব এর জন্য একের অধিক সেশন নিতে হতে পারে। পৃথিবী জুড়ে বর্তমানে যেসব রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে অথচ বিজ্ঞান কোন কার্যকরী ফল দিতে পারেনি ( neck pain, frozen shoulder, immune disorder, hhypertension, low back pain, IHD-ischemic heart disease, Asthma etc) সেসব রোগের একক চিকিৎসা হিসেবেও হিজামা ব্যবহৃত হচ্ছে। রোগের মেয়াদ যত দিনের চিকিৎসার জন্য তো সেরকম সময়ই লাগবে। তারপর ব্যথার জন্য যেসব সার্জারি করা হয় এসব অপারেশন থেকে কিছু কিছু স্থায়ী শারীরিক ক্ষতির ও আশংকা থেকে যায়। অথচ হিজামা তে কোন সাইড ইফেক্ট নেই। এভাবে শরীর জীবাণু মুক্ত করণ মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কোন ডাক্তারও দিতে পারবেন না যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে দিয়েছেন।
★এসব কোন সমস্যা না থাকলেও কি হিজামা করানো যাবে? হ্যা, করানো যাবে। এক. এতে সুন্নাহ পালন হবে দুই. নিয়মিত সুন্নাহ হিজামা করালে চুল বৃদ্ধি পায়, চুল পড়া কমে, স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়, অলসতা, অবসাদগ্রস্ততা বিদূরিত হয়, রোগজীবাণু সহজেই আক্রান্ত করতে পারে না, রক্ত পরিশুদ্ধ হয়, শরীর রোগ প্রতিরোধক্ষম হয়ে উঠে অনেকটা disease-proof এর মত।
মূল পোস্ট : হিজামার / Hijama আদ্যোপান্ত! (islamidawahcenter.com)