দূয়ার শক্তি!
January 4, 2022বাচ্চাদের জন্য সহজ রুকইয়াহ ও নিরাপত্তা!
March 16, 2022স্থলনের দিক থেকে মানুষের দেহে বীর্য হল পেশাবের মত; যা প্রয়োজন মত তৈরী হয় এবং সময় মত বের হয়ে যায়। বীর্য মানবদেহে একটি অমূল্য বস্তু। কিন্তু তা দেহের ভিতরেই থেকে গেলে ক্ষতিকর। তাই কুদরতের নিয়ম হল, অবিবাহিত যুবকেরও বীর্য স্বাভাবিক ও প্রকৃতিগতভাবে দেহ থেকে যথা সময়ে নির্গত হয়ে যায়। বিশেষ করে স্বপ্নের মাধ্যমে যৌনউত্তেজনামুলক কিছু দেখলে বা করলে বীর্যপাত হয়। আর তাকেই বলে স্বপ্নদোষ। যদিও তা দূষনীয় নয়, যদি তা বেশী আকারে না হয়। দোষের হয় তখনি, যখন মাসে ৪ থেকে ৫ বারের অধিক হতে থাকে। আর তখনই প্রয়োজন হয় চিকিৎসা ও আনুষঙ্গিক প্রতিব্যবস্থার। অতএব স্বাভাবিকভাবে স্বপ্নদোষ হওয়াতে যুবকের ঘাবড়াবার কিছু নেই। এতে কোন ক্ষতি আছে, এমন ধারণা করে চিন্তিত হওয়ারও কোন কারণ নেই। বীর্য বেশী হলে তা তরল হয়ে। স্থলন হবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম। অতএব স্বপ্নদোষে বীর্যক্ষয় হয়ে সে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, এমন দুশ্চিন্তা মনে এনে নিজেকে দুর্বল করা ঠিক নয়। অবশ্য অতিরিক্ত মাত্রায় হলে চিন্তার কারণ বটে।
তোমার স্বপ্নদোষ যদি বেশী হয়ে থাকে, তাহলে নিম্নলিখিত উপদেশমালা গ্রহণ কর; ইনশাআল্লাহ তা কম হয়ে যাবেঃ
১- যৌন-উত্তেজনামূলক কিছু দেখা, শোনা ও পড়া থেকে দুরে থাক।
২- মন থেকে সকল যৌন ও বিবাহ-চিন্তা দূর করে দাও। আর তার জন্য ব্যস্ততাময় কাজ খুঁজে নাও, দ্বীন ও আখেরাতমূলক বক্তৃতা শুনে, আলোচনা করে অথবা পড়ে অবসর সময়কে কাজে লাগাও।
৩- নির্জন বা একাকী বাস ও কুসংসর্গ ত্যাগ কর। পরহেজগার বন্ধুর সাথে সময় কাটাও।
৪- গুরুপাক ও উত্তেজক খাদ্য গ্রহণ করো না। বিশেষ করে রাত্রে এমন খাদ্য অবশ্যই খাবে না।
৫- নিয়মিত ঠান্ডা পানিতে গোসল কর।
মনে রাখবে যে, সিনেমা, ভিডিও, টিভি বা নোংরা পত্র-পত্রিকায় নারীর অর্ধনগ্ন দেহের ছবি অথবা মেলা-খেলা ও হাটে-বাজারে বেপর্দা মহিলা দেখে তা মানসপট থেকে দূর করতে না পারলে তুমি রাত্রে স্বপ্নদোষ থেকে বাঁচতে পারবে না। কারণ, বুঝতেই তো পারছ, উঠতি বয়সের তরঙ্গায়িত এমন যৌবন-জ্বালাকে দমন করতে প্রয়োজন হল পরহেযগারীর। আল্লাহ-ভীতির শীতল পানি দিয়ে সে আগুন যদি না নিভাতে পার, তাহলে স্বাস্থ্যহানি অবধার্য।
হ্যাঁ, আর স্বপ্নদোষের জ্বালাতন থেকে বাঁচতে গিয়ে কোন প্রকার শির্কে পতিত হয়ো না। যেমন, কোন প্রকার তাবীয বা অষ্টধাতুর মাদুলী ইত্যাদি হাতে বা কোমরে বেঁধে স্বপ্নদোষ বন্ধ করার বেকার অপচেষ্টা করো না। এতে লাভ তো হবে না। উল্টে ডবল ক্ষতি; পয়সাও যাবে এবং শির্কও হবে। তবে শয়নের বিভিন্ন শরয়ী আদব পালন করে স্বপ্নদোষ বন্ধ করতে পার। অতএব শোবার সময় আগে ওযু করে নেবে। অতঃপর ডান কাতে শুবে। উবুড় হয়ে শুবে না। ঘুমাবার পূর্বে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে।
সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে দুই হাতে ফুক দিয়ে সমস্ত শরীরে বুলিয়ে নেবে এবং এরূপ ৩ বার করবে। যতক্ষণ না ঘুম এসেছে ততক্ষণ দুআ, কুরআন অথবা মুখস্থ পাঠ পড়তে থাকবে। আর ভুলেও এ সময়ে যৌন বা বিবাহের চিন্তা মনেও আনবে না। খারাপ স্বপ্ন দেখে জেগে উঠলে বাম দিকে তিনবার থুথু মার, শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাও এবং পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোও।
আর তোমার জানা আছে যে, বীর্যপাত হলে গোসল ফরয। অবশ্য খারাপ স্বপ্ন দেখলে এবং জেগে উঠে কাপড় ভিজে না দেখলে গোসল ফরয নয়। তবে কাপড় ভিজে দেখলে এবং স্বপ্ন মনে না থাকলেও গোসল ফরয। রাত্রে হলে ফজরের আগেই গোসল সেরে জামাআতে ফজরের নামায পড়বে। আর জেনে রেখো যে, আল্লাহর ফরয আদায়ে লজ্জা করা হারাম।
উত্তেজনার পর পুরুষাঙ্গে পাতলা আঠালো পানি দেখা দিলে তা ধুয়ে কেবল ওযু যথেষ্ট। তাতে গোসল ফরয হয় না। আর সব সময়ের জন্য ধাতু ঝরার রোগ থাকলে প্রত্যেক নামাযের জন্য (কাপড় বদলে) ওযু জরুরী।
যুবক বন্ধু! যৌবনের যৌন-জ্বালার অন্ধকারে বিভ্রান্ত না হয়ে ধৈর্য ধর। অতঃপর যথাসময়ে একটি মনের মত সঙ্গিনী খুঁজে বিবাহ করে নাও। যত তাড়াতাড়ি বিবাহ করবে, তত তাড়াতাড়ি তোমার মন ও জীবন আলোকিত হবে। তারপর নিয়মিত যৌন-মিলন কর, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। মনের সকল দুশ্চিন্তা দূরীভূত হবে। এমন নৈতিকতাপূর্ণ জীবনে তুমি অবশ্যই বেহেস্তের ছায়া পাবে।
মূলঃ শাইখ আব্দুল হামীদ ফাইযী
–
যাদের এরপরও স্বপ্নদোষের সমস্যা হবে তারা ঘুমের পূর্বে একটি আমল করতে পারেন। যদিও এটা কোন কোরআন সুন্নাহের বর্ণিত আমল নয়। তবুও এটা অস্বীকার করার অবকাশ নেই যে, কোরআনে আল্লাহ সব ধরনের রোগের শিফা বা আরোগ্য রেখেছেন।
আমলটা হলোঃ
ঘুমের পূর্বে সূরা নুহ পাঠ করা।
সেটা সম্ভব না হলে সূরা ত্বরিক পাঠ করা তাও না পারলে অন্তত সূরা মাউন ৩ বার পাঠ করে ঘুমানো। এতে ইনশাআল্লাহ অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ বন্ধ হবে।
কপি পোস্ট~ ইবনে সিরাজ।
শেয়ার করুন।