রুকইয়াহ আরবি শব্দ আরবি প্রতিশব্দ رقى যা رقيـة শব্দের বহুবচন।
“রুকইয়াহ অর্থ দাঁড়ায় ঝাড়ফুঁক।
আমরা রুকইয়াহ শব্দের সাথে পরিচিত না হলেও আমাদের দেশের মানুষ “ঝাড়ফুঁক শব্দটির সাথে বেশ পরিচিত। জ্বর, মাথা ব্যথা প্রভৃতি কারণে অসুস্থ লোককে কিছু পড়ে ফুঁ দেওয়াকে এই রুক়্ইয়াহ বলা হয়। একে عزائم ও বলা হয়।
ঝাড়ফুঁক হতে পারে কার উপর সরাসরি বা পানি কিংবা খাদ্যের উপর করে।
ঝাড়ফুঁক করা ও করানো বৈধ যদি নিচের দুটো শর্ত লঙ্ঘন না করে কেউ।
(ক) কুরআনের আয়াত অথবা সহীহ হাদীসের দুআ দ্বারা হতে হবে।
(খ) সাথে সাথে এই দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে যে,আরোগ্যদাতা কেবল মহান আল্লাহ।
আমাদের দেশে কবিরাজেরা যে নিয়মে ঝাড়ফুঁক করে,তাতে উপরের দুইটা শর্তের মারাত্মক লঙ্ঘন করে।
ঝাড়ফুঁকের বিধান সম্পর্কে
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন ঝাড়ফুকে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।
(বর্ণনায় মুসলিম)
ঝাড়ফুঁক দুপ্রকারে বিভক্ত
যেমনঃ
(ক) শির্কমুক্ত ঝাড়ফুঁক।
এর পদ্ধতি হলো ক়ুর’আন থেকে কিছু পাঠ করে অসুস্থ ব্যক্তির উপর ফুঁ দেওয়া কিংবা আল্লাহর নাম নিয়ে তার মুক্তির জন্য দু‘আ করা।
এ ধরনের ঝাড়ফুঁক জায়েয, কেননা রাসুল (সাঃ) নিজে ঝাড়ফুঁক করেছেন, অনুমতি দিয়েছেন, এমনকি নির্দেশও দিয়েছেন। আওফ বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা জাহিলি যুগে ঝাড়ফুঁক করতাম, এ ব্যাপারে রসূল (সাঃ) এর মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন,
তোমরা কীভাবে ঝাড়ফুঁক করো তা আমার সামনে উপস্থাপন করো। যদি তাতে শির্কি কোনো কিছু না থাকে, তাহলে তাতে কোনো অসুবিধা নেই।
ইমাম সুয়ূতী বলেন, তিনটি শর্তে ‘আলিমগণ ঝাড়ফুঁকের বৈধতা দিয়েছেন। যথা,
(ক) ঝাড়ফুঁক হতে হবে কেবল আল্লাহর কালাম কিংবা আল্লাহর নাম ও সিফাত দ্বারা,
(খ) যা পাঠ করা হবে তা অবশ্যই আরবি ভাষায় হতে হবে এবং তার অর্থ বোধগম্য হতে হবে,
(গ) স্বয়ং ঝাড়ফুঁকের কোনো প্রভাব আছে বলে মনে করা যাবে না, বরং বিশ্বাস রাখতে হবে যে, একমাত্র আল্লাহর কুদরতেই প্রভাব সৃষ্টি হয়।
ঝাড়ফুঁকের পদ্ধতি হলো উল্লিখিত কিছু পড়ে অসুস্থ ব্যক্তির উপর ফুঁক দেওয়া, অথবা পড়ে পানিতে ফুঁক দিয়ে তা অসুস্থ ব্যক্তিকে পান করানো। যেমন সাবিত বিন কাইস (রাঃ) এর হ়াদীসে এসেছে যে রাসুল (সাঃ) বুতহান থেকে মাটি নিলেন, তা একটি পাত্রে রাখলেন। অতঃপর মুখে পানি নিয়ে তা সহ পাত্রের মাটির উপর ফুঁ দিলেন। সবশেষে পানিযুক্ত মাটি সাবিতের উপর ঢেলে দিলেন।
(খ) শির্কযুক্ত ঝাড়ফুঁক ।
এটা হলো এমন ধরনের ঝাড়ফুঁক, যাতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও সাহায্য কামনা করা হয়, অন্য কারও কাছে দু‘আ করা হয়, দোহাই দেওয়া হয় কিংবা আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়। যেমন, জিন, ফেরেশতা, নাবি কিংবা পুণ্যবান কোনো লোকের নাম নিয়ে ঝাড়ফুঁক করা। এটা বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত।
অথবা ঝাড়ফুঁক যদি আরবি ছাড়া অন্য ভাষায়, কিংবা অবোধগম্য শব্দ দ্বারা হয়, তাহলে তা-ও এ প্রকারেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। কেননা অসতর্কতা হেতু এতে কুফুরি কিংবা শির্কি কথাবার্তা ঢুকে পড়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। তাই এধরনের ঝাড়ফুঁকও শারী‘আহ্য় নিষিদ্ধ।
আল্লাহ আমাদের কে শির্ক মুক্ত রুকইয়াহ গ্রহণ করার তাওফীক দান করুন। । কালেক্টেড পোস্ট।