রুকইয়াহ কি ও কেন?
March 16, 2022জ্বীন যাদুর চিকিৎসায় “রুকইয়াহ”ই কী একমাত্র শরয়ী সমাধান?
October 28, 2022লবন পানি দিয়ে বমি করা। একটি প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা ব্যবস্থা! লিখেছেন- আব্দুল্লাহ ফাহাদ।
ইদানীং কিছু মিথ্যাচারকারী ব্যক্তিরা ও একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিজেদের জ্ঞানের সল্পতায় রুকইয়াহকে প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে এবং নিজেদের খুড়িয়ে চলা প্রতিষ্ঠানকে লাইম লাইটে আনার স্বার্থে রুকইয়াহ শারইয়্যাহর মূল অংশকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। তাদের এসব প্রোপাগান্ডা দীর্ঘ দিনের পরিকল্পিত চক্রান্ত হওয়ার দরুন এতদিন চুপ ছিলাম। “রুকইয়াহর শুদ্ধতা চাই” স্লোগানের আড়ালে তাদের মূল টার্গেট ছিল বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত রুকইয়াহর মানদন্ডকে ভেঙ্গে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং করা এবং তাদের পথের কাঁটা সরিয়ে দেওয়া। কারণ তাদের নিজেদের জ্ঞানের যোগ্যতায় এত জনপ্রিয়তা পাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। যদিও এসব আলোচনা এই পোস্টের অংশ নয়; তবুও প্রাসঙ্গিকতার স্বার্থে কিছুটা উল্লেখ করলাম।
আলিমদের সাথে আলোচনা শেষে এই পুরো গল্প কিছুদিনের মাঝেই সামনে উঠে আসবে ইনশাআল্লাহ। সত্যান্বেষীরা সত্য জানতে পারবে আর অভিশপ্ত হবে সেই সকল মিথ্যারোপকারী ও তাদের পূজক সমর্থকেরা। আর আখিরাতের আযাব তো রয়েছেই। তবে চেষ্টা করবো দুনিয়াতে এদেরকে কম বলার। কারণ আমি চাই না এদের আখিরাতের পাওনা এক বিন্দু কমে যাক। ততটুকুই প্রকাশ করবো যতটুকু প্রকাশ না করলে আওয়াম সত্য জানতে পারবে না।
ومكروا ومكر الله والله خير الماكرين-
রুকইয়াহ শারইয়্যাহতে যাদু নষ্টের ক্ষেত্রে ইস্তিফরাগ বা শরীরের অভ্যন্তরীণ বর্জ্য পরিস্কার করা হয় পাঁচ ভাবে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বমি করার মাধ্যমে ইস্তিফরাগ করা। ইবনুল কায়্যিম রাহঃ “যাদুর চিকিৎসায় রাসুল সাঃ এর নির্দেশনা” অধ্যায়ে এই আলোচনা নিয়ে এসেছেন। [1]
সমস্যা ভেদে পানির সাথে বরইপাতা বাটা, আদা, মধু, লবণ সহ বিভিন্ন ভেষজ মিশ্রিত করা হয়।
এটা যে শুধু শরয়ী রুকইয়াহতে চর্চা হয় বিষয়টি তা নয়। মডার্ন এ্যলোপ্যাথি বাদে বাকি শাস্ত্রগুলোতেও দীর্ঘদিন যাবৎ এই প্রক্রিয়া চর্চা হয়ে আসছে। [2]
রাসুল সাঃ নিজে এটা চর্চা করার দরুন এটা তিব্বুন নববীর অন্যতম অংশ এবং যাদু নষ্টের প্রধান দুটি পদক্ষেপের দ্বিতীয় ধাপের একটি অংশ হিসেবে গণ্য হয়। [3]
আয়ুর্বেদের অন্যতম শাস্ত্র হচ্ছে হাথা ইয়োগা। আয়ুর্বেদের ভেতর পঞ্চকর্ম রয়েছে। যার মাঝে অন্যতম হচ্ছে “ভামান”। হাথা ইয়োগাতে এই ভামানকে বলা হয় “কুঞ্জল ক্রিয়া।” এটা ইয়োগা মাস্টার, আয়ুর্বেদ ডাক্তারগণ এবং আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞগণ সর্বদা করিয়ে থাকেন। [4]
কুঞ্জল ক্রিয়া করা হয় পানিতে লবণ মিশিয়ে তা পান করে অতঃপর বমি করার দ্বারা। সাধারণত এক লিটার পানিতে এক চামচ বা দুই চামচ লবণ মিশিয়ে [5, 3] অথবা ৫% লবণ মিশ্রিত গরম পানি [6] পান করে বমি করার মাধ্যমে কুঞ্জল ক্রিয়া করা হয়ে থাকে। অল্টারনেটিভ মেডিসিন হওয়ার দরুন এর উপর সায়েন্টিফিক ব্যাপক রিসার্চ করা হয় নি। কিন্তু এটা হাজার বছর ধরে আয়ুর্বেদ ও তিব্বুন নববীতে (বমি করা) চর্চা হয়ে আসছে। এই পদ্ধতি সায়েন্টিফিকভাবে কতটুকু নিরাপদ তা রিসার্চের স্বার্থে 18 জন ভলান্টিয়ারের ওপর বেংগালুর ইউনিভার্সিটির অধীনে একটি রিসার্চ করা হয়, যা PubMed এ পিয়ার রিভিউড রিসার্চ পেপার আকারে প্রকাশিত হয়। [6] – [Peer review under responsibility of Transdisciplinary University, Bangalore.]
রিসার্চ পেপার অনুযায়ী লবন পানি পান করে বমি করার দ্বারা কুঞ্জল ক্রিয়া করার পর তাদের কোনো সমস্যা হয় নি এবং মেডিক্যালি তারা সবাই ফিট ছিলেন। ইলেক্ট্রোলাইট ইম্ব্যালেন্সের গুজব এবং ইস্তিফরাগের এই প্রক্রিয়ার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের শরীরের ইন্টেনশনাল কন্ডিশন আর আন-ইন্টেনশনাল কন্ডিশনে বমির রিয়্যাকশন ভিন্ন হয়ে থাকে। বিষ সেবন করা রোগীর স্টোমাক ওয়াশের কন্ডিশনে ইম্ব্যালেন্সের চান্স থাকে। কারণ রোগীর শরীরে অলরেডি বিষের প্রভাব ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং অর্গান সমূহ ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে। ফলে রোগীর শরীর হাল ছেড়ে দেয়। অপরদিকে ইন্টেনশনাল সিক্রেশনে এই ধরনের কোনো ঝুঁকি নেই, যেমন কেউ গাড়ী তে ওঠার পর বমি বমি লাগলে সে নিজে থেকে বমি করার পর তার শরীর আরো চাংগা হয়, আরো ভালো লাগে। এই জায়গার ইলেক্ট্রোলাইটের গল্প নিরেট মূর্খ ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ আনবেনা। অবশ্য এই পার্থক্য টুকু বোঝার জন্য মিথ্যাচারকারীদের এবিষয়ে নূন্যতম জ্ঞান থাকা আবশ্যক ছিল!
বিঃদ্রঃ আয়ুর্বেদে প্রতিষ্ঠিত চর্চা থাকা সত্ত্বেও আমাদের পেশেন্টদেরকে রুকইয়াহতে এত লবণ কখনো দেওয়া হয় নি। মিথ্যুকদের উপর আল্লাহর লা’নত।
কুঞ্জল ক্রিয়া বা ইস্তিফরাগ প্রত্যেকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী করবে। এক লিটার পানি থেকে শুরু করে এর ক্যাপাসিটি আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। আয়ুর্বেদের ইয়োগা প্র্যাক্টিশনারদের এক বসায় বিশ লিটার লবণ পানি দিয়েও বমি করার রেকর্ড আছে। [7]
ইন্ডিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল ইত্যাদি দেশে বিভিন্ন আয়ুর্বেদ ক্লিনিকে এটা বহুল প্রচলিত। [8]
মডার্ন সাইকিয়াট্রি ও মেডিসিনে কোথাও কোথাও এর প্র্যাক্টিস অলরেডি শুরু হয়েছে ভিন্ন নামে ও ভিন্ন পদ্ধতিতে। যাকে KAMBO Therapy বলা হয়। [9]
ইতিপূর্বে ABC News ও The Doctors চ্যানেল এই ব্যাপারে Documentary বানিয়েছিল। [10]
অ্যামাজনের এক প্রকার ব্যাঙের বিষকে শরীরে ইনজেক্ট করে বডির লিমফেটিক সিস্টেম ও ব্রেইন সেলগুলোকে [11] স্টিমুলেট করা হয়। ফলে রোগীর প্রচন্ড ঘাম ও বমি হয় এবং রোগী পানি খেয়ে বমি করে। [12]
ঠিক একই জিনিস রুকইয়াহতে ভিন্ন প্রসিডিওরে ইস্তিফরাগের সমন্বয়ে করা হয়।
একজন বোর্ড সার্টিফাইড বিশেষজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্টের দাবী মতে এই পদ্ধতির দ্বারা তিনি ডিপ্রেশন এ্যংজাইটি সহ বেশ কিছু রোগ নিরাময় করেছেন। [13]
তবে এ্যলোপ্যাথির সংশয়বাদি বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে গবেষণা করার পরও এর কূল কিনারা পায় নি। এনাদের অনেকে একে প্লাসিবো ইফেক্ট বলে উড়িয়ে দিতে চান। (রুকইয়াহর ক্ষেত্রেও একই কাজ করে থাকেন উনারা! এবিষয়ে বিস্তারিত ইল্মের অভাবে ইফেক্টের পেছনের কারণকে Placebo Effect বলে চালিয়ে দেন।)
উপসংহার-
কনশাস ভমিটিং পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা গুলোর মধ্যে অন্যতম। নির্দিষ্ট কিছু কন্ডিশন বাদে প্রায় সবার জন্যই নিরাপদ। হাজার বছর ধরে যা চর্চিত হয়ে আসছে। আর ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্সের গপ্পোটা হচ্ছে আন কনশাস কন্ডিশনে ভমিটিং বা আন ইন্টেনশনাল ভমিটিং এর ক্ষেত্রে। কনশাস ভমিটিং এর সাথে ইলেক্ট্রোলাইট ইম্ব্যালেন্সের গপ্পো জুড়ে দেওয়া হচ্ছে এমন সব লোকের কাজ যারা সম্ভবত বছরে একদিনের জন্যও বইয়ের কাছে যায় নি। মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের বছরে পাস করলেই কি আর না করলেই কি। আমরা তো জানি এগুলো। রিসেন্ট ঘটনায় এই বাচ্চা ইন্টার্নগুলো যতগুলো মেডিকেল এক্যুইজিশন তুলেছে সবগুলো বোগাস ছিল। একটা একটা করে সামনে আনবো ইনশাআল্লাহ। চিকিৎসা কমিউনিটির প্রকৃত মাইনুদ্দিনরা সামনে আসা প্রয়োজন না? ব্যক্তি যখন বাচাল হয়, অজ্ঞতাকে তখন জ্ঞান বলে চালিয়ে দিয়ে মাইনুদ্দিনরা শাইখ সাজে। অডিয়েন্সের কথা আর কি বলবো…
[বিঃদ্রঃ রুকইয়াহ তে ইস্তিফরাগের বিষয়টি তিব্বে ইলাহীর সমন্বয়ে করা হয়। এর চিকিৎসার বৈজ্ঞানিক দিকটি শুধুমাত্র উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। যা অন্যান্য শাস্ত্রে চর্চিত হয়। “রুকইয়াহ ইস্তিফরাগ” পুরোপুরি বোঝার জন্য এই অার্টিকেল টি যথেষ্ঠ নয়। সেটা ভিন্নভাবে আলোচনার দাবী রাখে।]
তথ্যগুলো উপকারী মনে হলে শেয়ার করতে পারবেন।
রেফারেন্স সমূহঃ
[1]
فَصْلٌ فِي هَدْيِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي عِلَاجِ السِّحْرِ الَّذِي سَحَرَتْهُ الْيَهُودُ بِهِ- زاد المعاد- طب النبوي
وَالْمَقْصُودُ: ذِكْرُ هَدْيِهِ فِي عِلَاجِ هَذَا الْمَرَضِ، وَقَدْ رُوِيَ عَنْهُ فِيهِ نَوْعَانِ:
أَحَدُهُمَا – وَهُوَ أَبْلَغُهُمَا – اسْتِخْرَاجُهُ وَإِبْطَالُهُ، كَمَا صَحَّ عَنْهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ…… وَالنَّوْعُ الثَّانِي: الِاسْتِفْرَاغُ فِي الْمَحَلِّ الَّذِي يَصِلُ إِلَيْهِ أَذَى السِّحْرِ، فَإِنَّ لِلسِّحْرِ تَأْثِيرًا فِي الطَّبِيعَةِ، وَهَيَجَانَ أَخْلَاطِهَا وَتَشْوِيشَ مِزَاجِهَا، فَإِذَا ظَهَرَ أَثَرُهُ فِي عُضْوٍ، وَأَمْكَنَ اسْتِفْرَاغُ الْمَادَّةِ الرَّدِيئَةِ مِنْ ذَلِكَ الْعُضْوِ، نَفَعَ جِدًّا.
رَوَى الترمذي فِي ” جَامِعِهِ ” عَنْ معدان بن أبي طلحة، «عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (قَاءَ فَتَوَضَّأَ) فَلَقِيتُ ثَوْبَانَ فِي مَسْجِدِ دِمَشْقَ، فَذَكَرْتُ لَهُ ذَلِكَ، فَقَالَ: (صَدَقَ: أَنَا صَبَبْتُ لَهُ وَضُوءَهُ) » . قَالَ الترمذي: وَهَذَا أَصَحُّ شَيْءٍ فِي الْبَابِ.
الْقَيْءُ: أَحَدُ الْاِسْتِفْرَاغَاتِ الْخَمْسَةِ الَّتِي هِيَ أُصُولُ الِاسْتِفْرَاغِ، وَهِيَ الْإِسْهَالُ وَالْقَيْءُ وَإِخْرَاجُ الدَّمِ وَخُرُوجُ الْأَبْخِرَةِ وَالْعَرَقِ، وَقَدْ جَاءَتْ بِهَا السُّنَّةُ
[3]
رَوَى الترمذي فِي ” جَامِعِهِ ” عَنْ معدان بن أبي طلحة، «عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (قَاءَ فَتَوَضَّأَ) فَلَقِيتُ ثَوْبَانَ فِي مَسْجِدِ دِمَشْقَ، فَذَكَرْتُ لَهُ ذَلِكَ، فَقَالَ: (صَدَقَ: أَنَا صَبَبْتُ لَهُ وَضُوءَهُ) » . قَالَ الترمذي: وَهَذَا أَصَحُّ شَيْءٍ فِي الْبَابِ.
[8]