হিজামা কি বিজ্ঞানসম্মত? বাস্তবতা উপলব্ধি করুন।

হিজামা চিকিৎসা ও আমার অভিজ্ঞতা
November 16, 2021
অলিম্পিকে অ্যাথলেটরা হিজামা চিকিৎসা নিচ্ছেন কেন?
November 16, 2021
হিজামা চিকিৎসা ও আমার অভিজ্ঞতা
November 16, 2021
অলিম্পিকে অ্যাথলেটরা হিজামা চিকিৎসা নিচ্ছেন কেন?
November 16, 2021

হিজামা কি বিজ্ঞানসম্মত? বাস্তবতা উপলব্ধি করুন।

হিজামা কি বিজ্ঞানসম্মত? বাস্তবতা উপলব্ধি করুন।

বিজ্ঞান আপনাকে আনেক গল্পই শোনাবে৷ কিন্তু, আপনার ব্যাথার সমাধান দিতে পারবেনা! বিজ্ঞানের সবচেয়ে মজার বিষয় হল, বিজ্ঞান এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি, মাথাব্যথা কীভাবে হয়! এরকম বহু জিনিস রয়েছে৷ কাজেই বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে বাস্তবতা থেকে হারিয়ে যাওয়া কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়৷

আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন, আমি কোন বাস্তবতার কথা বলছি?

সেই বাস্তবতা, যখন আপনার বাবা কিংবা দাদীমাকে কোমরের ব্যাথায় কাতরাতে দেখেন, কিংবা চাচীকে হাটুর ব্যাথায় চেয়ারে বসে নামাজ পড়তে দেখেন৷ হয়তো আধুনিক যুগে আধুনিকতার পরিচয় দিতে অভ্যস্ত আপনারা অভিজ্ঞ ব্যাথা বিশেষজ্ঞের (!) দারস্থ হবেন৷ কিন্তু, তিনি আপনাকে কী চিকিৎসা দেবেন?
তিনি দিবেন tab. Rolac কিংবা tab. Diclofenac sodium ইত্যাদি NSAID. সাথে দিবেন cap. seclo কিংবা cap. Losectil ইত্যাদি PPI. আর হয়তো ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট৷ কিন্তু, NSAID ট্যাবলেটগুলো আপনার ব্যাথা কয়দিন বন্ধ রাখবে? আপনার বাবা/দাদী/চাচী ওষুধ ছেড়ে দেওয়ার ৪৮ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে ব্যাথা আবার শুরু হবে! তাহলে প্রশ্ন একটাই, ব্যাথার ওষুধ কি আজীবন খেয়ে যেতে হবে?
যদি তেমনটা চান, তবে ব্যাথার ওষুধগুলো খাওয়া আগে ওষুধগুলোর পার্শপ্রতিক্রিয়াগুলো একটু জেনে নিবেন৷ তারপরও যদি আপনার খেতে মন চায়, তবে আপনি স্বাধীনতা মনে যা খুশি করতে পারেন৷ আমি শুধু একটা পার্শপ্রতিক্রিয়ার কথা বলছি: কিডনী নষ্ট হয়ে যাওয়া৷ এজন্য ব্যাথার ওষুধ দেওয়ার সময় ডাক্তাররা পাঁচ দিনের বেশি দেননা৷ এবং প্রচুর পরিমাণেে পানি খেতে বলেন৷

তো এই হচ্ছে আপনার বিজ্ঞানের অবস্থা৷ এবার বাস্তবতায় আসুন৷ আপনার ব্যাথাগুলো যদি হিজামার মাধ্যেমে ভালো হয়, তবে খারাপ কোথায়? স্থায়ী ভাবে ভালো হবে কিনা, সেটা পরের বিষয়৷ কিন্তু, অন্তত কিডনীর উপর ঝুঁকি আসবেনা৷ আমিি স্বয়ং রোগীর কাছ থেকে শুনেছি, হিজামা করিয়ে তিনি মাথাব্যথার উপকার পেয়েছেন৷ আপনি যদি তেমন কাউকে পান, তবে শুনে দেখবেন, তিনি উপকার পেয়েছেন কিনা৷ অনেকেই বলবে, এতে কোনো উপকার নেই, এগুলো ভয়ানক, ক্ষতিকর৷ আপনি যদি বুদ্ধিমান হন, তবে আপনি এমন কারোর কথা শুনবেন, যিনি নিজের শরীরে হিজামা করিয়েছেন৷ আমি উইকিপিডিয়াতে দেখলাম, হিজামা করলে চামড়া পুড়ে যায়়, ঘাঁ হয়, আরো কত রকম…. অথচ, আপনি ব্যাথার যে ওষুধগুলো খাচ্ছেন, তার পার্শপ্রতিক্রিয় তার থেকে ভয়াবহ! আসল কথা হচ্ছে, আপনি সঠিকভাবে হিজামা করলে আপনার কোনো সমস্যাই হবেনা৷ হিজামাতে আগুনের ব্যবহার তো আবশ্যক নয়, যে চামড়া পোড়ার ভয় থাকবে৷ স্বয়ং চীন দেশেই হিজামা প্রাক্টিজ করা হয়, যাকে Cupping (কাপিং) বলা হয়৷

দুবাই, শিকাগোর মত আধুনিক শহরগুলোতে হিজামা করা হয়! আর, আপনি ভাবছেন, কোথাকার কোন কুসংস্কার!

আসুন তাহলে হিজামার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি আছে কিনা, তা দেখে নেই:

মানুষের শরীরের টিস্যু বা কলা (দেখুন: কলা (জীববিজ্ঞান) – উইকিপিডিয়া) ক্ষতিগ্রস্ত হলে আহত টিস্যুু থেকে হিসটামিন, ব্রাডিকাইনিন, প্রস্টাগ্লানডিন ইত্যাদি কেমিক্যাল মুক্ত হয়, যা স্নায়ুকোষকে উত্তেজিত করে, ফলে আমরা ব্যাথা অনুভব করে থাকি৷

হিজামা বা কাপিং এর মাধ্যমে: আপনার শরীরে যে স্থানে কাপিং করা হবে, সেখানে কিছুটা আচড় কাটা হয়৷ তারপর, সেখানে কাপ বসিয়ে ভিতরের সব বায়ু টেনে নিয়ে কাপকে বায়ু শুন্য করা হয়৷ ফলে চামড়ার ভিতরে থাকা রস (তরল পদার্থ) কাপের ভিতরে জমা হয়৷

ছবিতে দেখছেন, যন্ত্র দিয়ে বায়ু টেনে নেওয়া হচ্ছে৷

এখন কথা হল, এই তরল পদার্থ বেরিয়ে গেলে ব্যাথা কীভাবে ভালো হবে? আমি আগেই বলেছি, আহত অংশ থেকে হিসটামিন, ব্রাডিকাইনিন, প্রস্টাগ্লান্ডিন নিঃসরণ হয়৷ হিজামার মাধ্যমে আহত জায়গা থেকে যে রস ( তরল পদার্থ— Interstitial fluid, গুগল সার্চ করুন) বেরিয়ে আসে, তার সাথে মূলত ব্যাথার জন্য দায়ী এই ক্যামিকেলগুলোও বের হয়ে আসে৷ খুব সম্ভবত এটি একটি কারণ, যার ফলে ব্যাথা কম থাকে৷ অন্যান্য কারণও থাকতে পারে৷

হিজামা করার পর চিত্র৷৷

পরিশেষে বলি, চিকিৎসা ব্যবস্থায় ওষুধ অপরিহার্য৷ কিন্তু, ওষুধে ভালো রয়েছে, মন্দও রয়েছে; ভালো কিছু হোক বা না হোক, মন্দটুকু হবেই৷ তবে সব ওষুধ ব্যাথার ওষুধের মত বিপজ্জনক নয়৷ আর হিজামাতে আপনার ভালো হোক বা না হোক, অন্তত মন্দটা হবেনা, ইনশাল্লাহ৷ আমি শুধু ব্যাথার কথা বললাম, কারণ এটি সবচেয়ে বেশি মানুষকে ভোগায় এবং বেশি ভোগায়৷ ব্যাথা ছাড়াও হিজামার আরো ব্যবহার রয়েছে৷

হিজামা (সিঙ্গা) এর মাধ্যমে যে সব রোগের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে কিংবা যেসব রোগের উন্নতি হয়:
১। মাইগ্রেন জনিত দীর্ঘমেয়াদী মাথাব্যথা
২। রক্তদূষণ
৩। উচ্চরক্তচাপ
৪। ঘুমের ব্যাঘাত (insomnia)
৫। স্মৃতিভ্রষ্টতা
৬। অস্থি সন্ধির ব্যাথা/ গেটে বাত
৭। পিঠের ব্যাথা
৮। হাঁটু ব্যাথা
৯। দীর্ঘমেয়াদী সাধারন মাথা ব্যাথা
১০। ঘাড়ে ব্যাথা
১১। কোমর ব্যাথা
১২। পায়ে ব্যাথা
১৩। মাংসপেশীর ব্যাথা (muscle strain), মাসল পুল
১৪। দীর্ঘমেয়াদী পেট ব্যথা
১৫। হাড়ের স্থানচ্যুতি জনিত ব্যাথা, ফ্র‍্যাকচার পেইন
১৬। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা
১৭। সাইনুসাইটিস
১৮। হাঁপানি (asthma)
১৯। হৃদরোগ (Cardiac Disease)
২০। রক্তসংবহন তন্ত্রের সংক্রমন
২১। টনসিলাইটিস, ফ্যারিঞ্জাইটিস, ব্রংকাইটিস
২২। দাঁত/মুখের/জিহ্বার সংক্রমন
২৩। গ্যাস্ট্রিক পেইন, গ্যাস্ট্রিক আলসার, এসিডিটি, esophageal varices
২৪। মুটিয়ে যাওয়া (obesity)
২৫। দীর্ঘমেয়াদী চর্মরোগ (Chronic Skin Diseases)
২৬। ত্বকের নিম্নস্থিত বর্জ্য নিষ্কাশন
২৭। ফোঁড়া-পাঁচড়া সহ আরো অনেক রোগ,
২৮। ডায়াবেটিস (Diabetes) ও ডায়াবেটিক ফুট,
২৯। ভার্টিব্রাল ডিস্ক প্রোল্যাপ্স/ হারনিয়েশান,
৩০। চুল পড়া (Hair fall),
৩১। মানসিক সমস্যা (Psychological disorder),
৩২। পারকিনসন্স ডিজিজ
৩৩। কিডনির সমস্যা
৩৪। স্পোর্টস ইঞ্জুরি (খেলোয়াড়, আর্মি, কনট্যাক্ট স্পোর্টস)
৩৫। কানের সমস্যা
৩৬। ক্যান্সারের ব্যাথা নিয়ন্ত্রন,
৩৭। লিভার ডিজিজ, পোর্টাল হাইপারটেনশান,
৩৮। হরমোনাল সমস্যা,
৩৯। ব্রেইন ডিজিজ ও ডিজঅর্ডার৷

আরেকটি লিংকে ঘুরে আসুন, তাহলে বুঝবেন: রিও অলিম্পিকে অ্যাথলেটরা বেছে নিচ্ছেন মহানবীর চিকিৎসা পদ্ধতি :: BanglaNews24.com mobile

ইনি হচ্ছেন সেই মাইকেল ফেল্পস, যিনি অলিম্পিিক সাঁতারে সর্বোচ্চ সংখ্যক স্বর্ণ জিতে (আটটি) বিশ্ব রেকর্ড গড়েন! তার শরীরে হিজামা-কাপিং এর চিহ্ন থাকায় তিনি পত্রিকার শিরোনামে উঠে আসেন! বিশ্বখ্যাত অলিম্পিয়ান, যার পিছে ফিজিশিয়ান, থেরাপিস্ট, স্পেশালিস্টরা দৌড়া দৌড়ি করে, তিনি কেন হিজামা-কাপিং করতে যাবেন বলতে পারেন কি?

রসূল (স) এর সুন্নাহকে অবজ্ঞা করার দুঃসাহস দেখাবেননা৷

 

লিখেছেন-

নাঈমুল মুশফিক (Naimulmusfiq Naim)